ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ: ভ্রমণের উপযুক্ত সময়, যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা সহ বিস্তারিত।


ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ: ভ্রমণের উপযুক্ত সময়, যাতায়াত ও থাকার ব্যবস্থা সহ বিস্তারিত।
ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থানসমূহ।

ঢাকা জেলা বাংলাদেশের প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল। তবে কেবল রাজধানী হিসেবেই নয়, ঢাকা জেলার বিভিন্ন জায়গা পর্যটকদের জন্য ভীষণ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। এ জেলায় রয়েছে ঐতিহাসিক নিদর্শন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও আধুনিক বিনোদন কেন্দ্রের এক চমৎকার সংমিশ্রণ।

এই প্রবন্ধে জানাবো ঢাকা জেলার কিছু জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান সম্পর্কে ধাপে ধাপে—প্রতিটি স্থানের জন্য: ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়, খ) কিভাবে যাওয়া যায়, গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়, ঘ) কেন জনপ্রিয়, ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

১। লালবাগ কেল্লা (Lalbagh Fort)।

লালবাগ কেল্লা (Lalbagh Fort)।


ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

লালবাগ কেল্লা একটি মোঘল স্থাপত্য নিদর্শন, যা ১৭ শতকে নির্মিত হয়। ইতিহাস, স্থাপত্যশৈলী এবং আধ্যাত্মিকতা একত্রে মিশে আছে এই কেল্লায়, যা ইতিহাসপ্রেমীদের কাছে এক দুর্দান্ত গন্তব্য।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?
ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে বাস, রিকশা বা সিএনজিতে সহজেই পুরান ঢাকার লালবাগ মোড়ে পৌঁছানো যায়। গুলিস্তান থেকে রিকশায় ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
শীতকালে (নভেম্বর-ফেব্রুয়ারি) বা ছুটির দিনে সকাল বেলা গেলে ভিড় কম থাকে এবং আরামদায়ক পরিবেশে ঘোরা যায়।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?
মোঘল আমলের স্থাপত্য, আকর্ষণীয় বাগান, জাদুঘর, এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট লালবাগ কেল্লাকে বিশেষ জনপ্রিয় করেছে।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।
লালবাগ কেল্লার আশপাশে রয়েছে পুরান ঢাকার বিখ্যাত খাবারের দোকান যেমন—হানিফ বিরিয়ানি, নাজির হোসেন কাচ্চি। থাকার জন্য চকবাজার বা গুলিস্তানে সস্তা হোটেল ও গেস্ট হাউস পাওয়া যায়।

২। আহসান মঞ্জিল (Ahsan Manzil)।

আহসান মঞ্জিল (Ahsan Manzil)।



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?
এই নান্দনিক গোলাপী ভবনটি ছিল নবাব পরিবারের প্রাসাদ। এখন এটি জাদুঘর রূপে খোলা রয়েছে, যা ইতিহাস ও স্থাপত্যপ্রেমীদের জন্য খুবই আকর্ষণীয়।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?
সদরঘাটের কাছেই অবস্থিত আহসান মঞ্জিলে গুলিস্তান বা সায়েদাবাদ থেকে রিকশা/বাসে যাওয়া যায়। নৌকায়ও বুড়িগঙ্গা পাড়ি দিয়ে যাওয়া যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।
সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে (সোমবার বন্ধ)। শীতকালে ভ্রমণের জন্য শ্রেষ্ঠ সময়।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?
গোলাপী প্রাসাদ, নদীর ধারে অবস্থিতি এবং জাদুঘরভিত্তিক তথ্য ও নিদর্শন—সব মিলে এটি পর্যটকদের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।
নিমতলী ও সদরঘাটের আশেপাশে রয়েছে হোটেল ও খাবারের দোকান। বুড়িগঙ্গা তীরে ঘুরে নাস্তা বা দুপুরের খাবার খাওয়া যায়।

৩। জাতীয় জাদুঘর (National Museum)।

জাতীয় জাদুঘর (National Museum)


ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ ও প্রাণিবৈচিত্র্য সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা পাওয়া যায় এখানে। শিক্ষার্থীদের জন্য এটি শিক্ষণীয় স্থান।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

শাহবাগ মোড়ে অবস্থিত, ঢাকার যেকোনো স্থান থেকে বাস, রিকশা বা ব্যক্তিগত গাড়িতে যাওয়া যায়। মেট্রোরেল রুটও ভবিষ্যতে সংযুক্ত হতে পারে।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা (সোমবার বন্ধ)। শিক্ষাবর্ষের সময় স্কুল-কলেজের ছাত্ররা বেশি যায়।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

দেশীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধ ও শিল্পকলা বিষয়ে বিস্তৃত কালেকশন থাকার কারণে এটি দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয়।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

শাহবাগ, টিএসসি ও নিউমার্কেট এলাকায় রয়েছে বাজেট হোটেল ও নানাবিধ রেস্টুরেন্ট। হকার ফুড থেকে আধুনিক কফি শপ—সবই পাওয়া যায়।

৪। হাতিরঝিল (Hatirjheel)।

হাতিরঝিল (Hatirjheel)



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

নগরীর মাঝে মনোরম পরিবেশ, লেক, সেতু, ঝর্ণা ও নান্দনিক লাইটিং পর্যটকদের মন জয় করে। রাত্রিকালীন হাতিরঝিল আলাদা আবেদন সৃষ্টি করে।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

তেজগাঁও, গুলশান, মগবাজার কিংবা বাংলামোটর থেকে সহজেই যাওয়া যায়। বাস, রিকশা, বাইক কিংবা ব্যক্তিগত গাড়িতে যাওয়া যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত সময় সবচেয়ে উপভোগ্য। শীতকালে ভিড় কম হয়।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

পরিবার ও বন্ধুদের নিয়ে অবসর সময় কাটানোর জন্য, বিশেষ করে রাতে, এটি দারুণ জনপ্রিয় স্থান।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

পার্শ্ববর্তী এলাকা বেগুনবাড়ি, গুলশান, মগবাজার ও তেজগাঁওয়ে নানা ধরণের খাবারের দোকান, কফিশপ ও রেস্টুরেন্ট আছে। থাকার জন্য গুলশান ও বনানীর হোটেলগুলো উপযুক্ত।

৫। ফ্যান্টাসি কিংডম (Fantasy Kingdom Theme Park)।

ফ্যান্টাসি কিংডম (Fantasy Kingdom Theme Park)



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

এটি একটি আধুনিক থিম পার্ক, যেখানে শিশু থেকে বড় সবার জন্য আছে নানা রকম রাইড, ওয়াটার পার্ক এবং বিনোদন ব্যবস্থা।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

আশুলিয়ার জামগড়া এলাকায় অবস্থিত। গাবতলী থেকে বাস, প্রাইভেট কার কিংবা রেন্ট-এ-কারে যাওয়া যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

শুক্রবার ও ছুটির দিন বাদে যাওয়া ভালো, কারণ সে সময় ভিড় কম থাকে। শীতকালে সবচেয়ে উপযোগী।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

পারিবারিক ঘোরাফেরা ও শিশুদের আনন্দদায়ক সময় কাটানোর জন্য এটি একটি বড় আকর্ষণ।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

আশেপাশে রিসোর্ট, রেস্ট হাউজ ও খাবারের দোকান রয়েছে। ঢাকার ভেতরে ফিরে এসেও থাকা ও খাওয়া সম্ভব।

৬। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন (লুই কানের স্থাপত্য): Bangladesh National Parliament Building।

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন (লুই কানের স্থাপত্য): Bangladesh National Parliament Building



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই কানের নকশায় তৈরি এই ভবনটি শুধু বাংলাদেশের রাজনৈতিক কেন্দ্র নয়, আধুনিক স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শনও বটে। এটি স্থাপত্য শিক্ষার্থী, গবেষক ও সাধারণ দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

শেরে বাংলা নগর এলাকায় অবস্থিত। ফার্মগেট, আগারগাঁও, ধানমণ্ডি বা মিরপুর থেকে সহজেই বাস, রিকশা বা সিএনজিতে যাওয়া যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

শীতকাল (নভেম্বর–ফেব্রুয়ারি) ঘুরতে উপযুক্ত। নিরাপত্তার কারণে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণের জন্য আগে অনুমতি নিতে হয়।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

এর আধুনিক ডিজাইন, লেক ঘেরা পরিবেশ এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি একে জনপ্রিয় করেছে।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

নিকটবর্তী এলাকায় রয়েছে আগারগাঁও, ফার্মগেট ও শ্যামলীর হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট। পাশাপাশি সংসদ ভবনের আশেপাশে টং দোকানও রয়েছে।

৭। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (Suhrawardy Udyan)।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান (Suhrawardy Udyan)।



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

এই ঐতিহাসিক উদ্যানেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং সবুজ খোলা জায়গা একত্রে এই উদ্যানকে দর্শনীয় করেছে।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

শাহবাগ মোড় থেকে হাঁটা পথেই যাওয়া যায়। এছাড়া যেকোনো প্রান্ত থেকে রিকশা, বাসে সরাসরি যাওয়া যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

ভোর বা বিকেলে হাঁটাহাঁটি বা অবসর কাটানোর জন্য উত্তম সময়। শীতকাল উপযুক্ত।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

ঐতিহাসিক গুরুত্ব, পরিবার নিয়ে বেড়ানোর স্থান ও সবুজ পরিবেশ একে শহরের বুকে প্রাণ দিয়েছে।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

টিএসসি, শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশে বিভিন্ন হোটেল ও খাবারের দোকান রয়েছে।

৮। ঢাকা বিমানবন্দর (Hazrat Shahjalal Airport, Dhaka)।

ঢাকা বিমানবন্দর (Hazrat Shahjalal Airport, Dhaka)



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বাংলাদেশের প্রধান আন্তর্জাতিক প্রবেশদ্বার। বিমানের ওঠানামা দেখা, ফটোশুট এবং ভ্রমণপূর্ব উত্তেজনার কারণে এটি অনেকের আগ্রহের কেন্দ্র।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

উত্তরা, বনানী, মহাখালী বা গাজীপুর থেকে বাস, সিএনজি বা ব্যক্তিগত গাড়িতে যাওয়া যায়। বিমানবন্দর রেল স্টেশনও নিকটেই।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

সকাল বা সন্ধ্যায় বিমান ওঠানামার সময় দেখা যায় বেশি ভিড়।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

বিমানের কাছাকাছি যাওয়ার উত্তেজনা, নতুন দেশ যাত্রার স্মৃতি এবং এভিয়েশনপ্রেমীদের আগ্রহ একে জনপ্রিয় করেছে।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

বিমানবন্দর এলাকায় রয়েছে অনেক নামি হোটেল যেমন রেডিসন, লা মেরিডিয়ান। খাবারের জন্য রয়েছে ফাস্টফুড চেইন ও স্থানীয় খাবার দোকান।

৯। শহীদ মিনার ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ(Shaheed Minar and Central Shaheed Minar)।

শহীদ মিনার ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ(Shaheed Minar and Central Shaheed Minar)



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

বাংলা ভাষার জন্য প্রাণদানকারী শহীদদের স্মৃতিরক্ষায় নির্মিত শহীদ মিনার একটি জাতীয় গর্বের প্রতীক। একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে লাখো মানুষ এখানে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিকটে অবস্থিত শহীদ মিনারে শাহবাগ বা নীলক্ষেত থেকে রিকশা বা হেঁটে যাওয়া যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

২১শে ফেব্রুয়ারি বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সবচেয়ে উপযুক্ত। এছাড়া বছরের যেকোনো সময় পরিদর্শন করা যায়।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

ভাষা আন্দোলনের প্রতীক হিসেবে এটি জাতীয় ঐক্য ও গৌরবের কেন্দ্র। শিক্ষার্থী, বিদেশি পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীরা এটি দেখতে আসেন।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

শাহবাগ, নিউমার্কেট ও এলিফ্যান্ট রোড এলাকায় রয়েছে হোটেল ও রেস্টুরেন্টের সমাহার।

১০। রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ, ঢাকেশ্বরী মন্দির (Ramakrishna Mission and Dhakeshwari)।

রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ, ঢাকেশ্বরী মন্দির (Ramakrishna Mission and Dhakeshwari)।



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

হিন্দু ধর্মের ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্বসম্পন্ন এই দুইটি স্থান ধর্মীয় দর্শনার্থী ও গবেষকদের কাছে সমানভাবে জনপ্রিয়।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে রিকশায় যাওয়া যায়। ঢাকেশ্বরী মন্দির হাইকোর্টের পাশে অবস্থিত।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

দূর্গাপূজা, জন্মাষ্টমী বা অন্যান্য হিন্দু ধর্মীয় উৎসবের সময় ঘোরার উপযুক্ত সময়।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

ধর্মীয় শান্তি, ইতিহাস এবং স্থাপত্যের কারণে ধর্মপ্রাণ ও সাধারণ দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয়।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

নিকটবর্তী এলাকায় বিভিন্ন বাজেট হোটেল ও খাবারের দোকান রয়েছে।

১১। গণভবন ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর (Ganabhaban and Bangabandhu Memorial Museum)।

গণভবন ও বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর (Ganabhaban and Bangabandhu Memorial Museum)



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

জাতির পিতার বাসভবন হিসেবে পরিচিত ধানমণ্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরটি মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে জানার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডে অবস্থিত। যে কোনো প্রান্ত থেকে সিএনজি বা বাসে সহজেই যাওয়া যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

সাপ্তাহিক ছুটি বাদে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

মুক্তিযুদ্ধ, জাতির পিতার ইতিহাস এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনের জন্য জনপ্রিয়।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

ধানমণ্ডি এলাকায় রয়েছে অনেক রেস্টুরেন্ট ও হোটেল, যেমন ক্যাফে থার্টি থ্রি, ব্যাংলো হোটেল ইত্যাদি।


১২। বালু নদীর পাড় ও চড় এলাকা: Balu River Bank and Char Area (আউটিং স্পট)।



বালু নদীর পাড় ও চড় এলাকা: Balu River Bank and Char Area



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

শহরের কোলাহল থেকে দূরে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কিছু সময় কাটাতে বালু নদীর চরে যাওয়া হয়। পরিবার ও বন্ধুদের সাথে পিকনিকের জন্য উপযুক্ত।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

রামপুরা, বাড্ডা বা খিলগাঁও থেকে রিকশা বা বাইকে যাওয়া যায়। কিছু অংশে হেঁটেও যেতে হয়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

শীতকাল বা শুকনো মৌসুম (নভেম্বর–মার্চ) সবচেয়ে উপযুক্ত, কারণ বর্ষায় নদীর পানি বাড়ে।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

প্রকৃতি, খোলা আকাশ, নদীর পাড় ও নিরিবিলি পরিবেশ একে জনপ্রিয় করেছে।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

নিকটবর্তী এলাকায় অস্থায়ী চায়ের দোকান ও স্ন্যাকস পাওয়া যায়। থাকার জন্য ঢাকায় ফিরে যাওয়া উত্তম।

১৩। জাতীয় চিড়িয়াখানা (মিরপুর) :National Zoo (Mirpur).

জাতীয় চিড়িয়াখানা (মিরপুর) :National Zoo (Mirpur)



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণী দেখতে চাইলেই জাতীয় চিড়িয়াখানায় যাওয়া হয়। শিশুদের জন্য এটি শিক্ষণীয় ও বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

মিরপুর ১ নম্বর বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকশায় বা হেঁটে যাওয়া যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

শীতকালে (নভেম্বর–ফেব্রুয়ারি) সবচেয়ে আরামদায়ক, বিশেষত ছুটির দিনে।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

বাংলাদেশে এতো বড় প্রাণী সংরক্ষণাগার একমাত্র এখানেই। পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর উপযুক্ত স্থান।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

মিরপুর এলাকায় হোটেল ও স্থানীয় খাবারের দোকান রয়েছে।

১৪। জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন) : National Botanical Garden.

জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান (বোটানিক্যাল গার্ডেন) : National Botanical Garden.



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

প্রকৃতিপ্রেমী, উদ্ভিদ গবেষক ও পরিবেশ অনুরাগীদের জন্য এটি এক স্বর্গরাজ্য।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

মিরপুর-১ থেকে হেঁটে বা রিকশায় গিয়ে প্রবেশ করা যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

বর্ষাকাল ও শরৎকালে উদ্ভিদগুলো সবুজ ও পরিপূর্ণ থাকে।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

বিভিন্ন বিরল ও বিলুপ্তপ্রায় উদ্ভিদের সংগ্রহ, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং ফটোগ্রাফির জন্য জনপ্রিয়।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

চিড়িয়াখানা সংলগ্ন হওয়ায় একই সুবিধা প্রযোজ্য।

১৫। বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার (Bangabandhu Novotheater)।

বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার (Bangabandhu Novotheater)



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

বিজ্ঞান ও মহাকাশ বিষয়ে আগ্রহীদের জন্য এটি একটি অনন্য অভিজ্ঞতা। ৩ডি ডোম থিয়েটার দর্শকদের মহাবিশ্বে নিয়ে যায়।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

আগারগাঁও, তেজগাঁও থেকে বাস, সিএনজি বা রিকশায় যাওয়া যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

সাপ্তাহিক ছুটির দিন শিশুদের জন্য ভালো সময়।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

প্রযুক্তি, বিজ্ঞান এবং আধুনিক বিনোদনের এক অসাধারণ সংমিশ্রণ।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

নিকটবর্তী এলাকায় ক্যাফেটেরিয়া ও হোটেল রয়েছে।

১৬। আশুলিয়ার জমিদার বাড়ি ও কৃষি এলাকা (Zamindar House and Agricultural Area in Ashulia)।

আশুলিয়ার জমিদার বাড়ি ও কৃষি এলাকা (Zamindar House and Agricultural Area in Ashulia)



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

পুরনো ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি, সবুজ খেত ও পল্লী পরিবেশ পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

গাবতলী থেকে বাসে বা বাইকে সহজে যাওয়া যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

শীতকাল বা বর্ষা শেষে সময় সবচেয়ে আকর্ষণীয়।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

গ্রামীণ জীবন, ঐতিহাসিক স্থাপত্য ও প্রকৃতি মিলিয়ে একটি স্বতন্ত্র অভিজ্ঞতা।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

নিকটবর্তী গ্রামীণ হোটেল ও ঢাকার শহরে ফিরে থাকার ব্যবস্থা সুবিধাজনক।

১৭। তিতুমীর কলেজ চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধ স্মারক (Titumir College Campus and Liberation War Memorial)।

তিতুমীর কলেজ চত্বর ও মুক্তিযুদ্ধ স্মারক (Titumir College Campus and Liberation War Memorial)



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

মুক্তিযুদ্ধ স্মারকের মাধ্যমে ইতিহাস চেনা যায়। শিক্ষার্থী ও ইতিহাস গবেষকদের জন্য আদর্শ।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

বনানী বা মহাখালী থেকে সহজে যাওয়া যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

সারা বছরই যাওয়া যায়, তবে স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে ভিন্নমাত্রা থাকে।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও জাতীয় চেতনার কেন্দ্র।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

বনানী ও মহাখালীতে থাকার ও খাবারের বিভিন্ন বিকল্প রয়েছে।


১৮। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর (সোবহানবাগ):Liberation War Museum (Sobhanbagh).

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর (সোবহানবাগ):Liberation War Museum (Sobhanbagh)



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ধারাবাহিক ইতিহাসচিত্র এখানে রয়েছে, যা শিক্ষামূলক।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

সোবহানবাগে অবস্থিত; ধানমণ্ডি বা নিউমার্কেট এলাকা থেকে যাওয়া যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

সারা বছরই খোলা থাকে; বিকেল সবচেয়ে উপযুক্ত।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে দেশের সেরা সংগ্রহশালা।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

নিকটবর্তী ধানমণ্ডি বা নিউমার্কেটে থাকার এবং খাওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে।


১৯। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ (Baitul Mukarram National Mosque) ও আশপাশের ইসলামিক স্থাপত্য।

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ (Baitul Mukarram National Mosque)



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

ইসলাম ধর্মের সর্ববৃহৎ কেন্দ্র হিসেবে এ মসজিদটির ঐতিহাসিক ও ধর্মীয় গুরুত্ব অনেক।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

পল্টন, গুলিস্তান বা মতিঝিল এলাকা থেকে সহজে যাওয়া যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

জুমার দিন বা রমজানের সময় ধর্মীয় অনুভূতি বেশি থাকে।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

স্থাপত্য, ধর্মীয় মূল্যবোধ এবং বড় জামাতে অংশগ্রহণের সুযোগের জন্য জনপ্রিয়।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

পল্টন ও গুলিস্তান এলাকায় হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ফাস্টফুড ও ইসলামিক বুকস্টোর রয়েছে।

২০। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর (University of Dhaka)।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর (University of Dhaka)



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, রাজনীতি ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, স্মৃতি চিহ্ন, গ্রন্থাগার, টিএসসি, চারুকলা ভবন, রোকেয়া হলসহ বহু স্থাপত্য দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

শাহবাগ, নীলক্ষেত, বাংলামোটর বা আজিমপুর এলাকা থেকে রিকশা বা হেঁটে যাওয়া যায়।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

শীতকাল বা বসন্তকালে ক্যাম্পাস ঘুরতে সবচেয়ে ভালো সময়। দুপুর বা বিকেলেও উপভোগ্য।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

শিক্ষা, রাজনীতি ও সংস্কৃতির মিশ্রণে এক অনন্য স্থান। চারুকলার দেয়ালচিত্র, একাডেমিক ভবনের নান্দনিকতা, ইতিহাস এবং মুক্তমঞ্চ সব কিছু একত্রে দেখতে পাওয়া যায়।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

শাহবাগ, নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকায় সুলভ ও মানসম্পন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে।



২১। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (Jagannath University) ও আশপাশের পুরান ঢাকা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (Jagannath University) ও আশপাশের পুরান ঢাকা।



ক) কেন পর্যটকরা ঘুরতে যায়?

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পুরান ঢাকার ঐতিহাসিক প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। এটি একদিকে যেমন শিক্ষার কেন্দ্র, অন্যদিকে পুরান ঢাকার স্থাপত্য ও সংস্কৃতির প্রবেশদ্বার।

খ) কিভাবে যাওয়া যায়?

গুলিস্তান, সদরঘাট বা নারিন্দা থেকে রিকশা বা হেঁটে যাওয়া যায়। গুলিস্তান থেকে হেঁটে মাত্র ১০–১৫ মিনিট।

গ) ভ্রমণের উপযুক্ত সময়।

সকালে বা বিকেলে গেলে পুরান ঢাকার পুরনো স্থাপত্য ভালোভাবে দেখা যায়।

ঘ) কেন জনপ্রিয়?

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশেই রয়েছে আহসান মঞ্জিল, হাজারি গলি, বুড়িগঙ্গা নদীর পাড়, স্বাদে-গন্ধে ভরা পুরান ঢাকার খাবার ও পুরনো ভবনের শৈল্পিক দৃশ্য।

ঙ) থাকার ও খাবারের ব্যবস্থা।

পুরান ঢাকায় থাকার জায়গা সীমিত হলেও গুলিস্তান, বাবুবাজার ও সদরঘাট এলাকায় সুলভ হোটেল ও বিখ্যাত খাবারের দোকান রয়েছে, যেমন হাজির বিরিয়ানি, ঠান্ডা পানির শরবত, চকবাজার ইত্যাদি।


উপসংহার :ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থান।

ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো ইতিহাস, সংস্কৃতি, আধুনিকতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অসাধারণ সংমিশ্রণ। প্রতিটি স্থানেই রয়েছে আলাদা বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য। তাই আপনি যদি একদিনেই ঐতিহাসিক ও আধুনিক ঢাকার স্বাদ নিতে চান, তাহলে এই স্থানগুলো হতে পারে আপনার শ্রেষ্ঠ পছন্দ।

আরো পড়তে ক্লিক করুন:


Post a Comment

0 Comments